২০২০-র সেই অভিশপ্ত ১৪ জুন, না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় ৪ বছর। আজ ২০২৪-এর ২১ জানুয়ারি সুশান্তের আরও একটা জন্মবার্ষিকী। বেঁচে থাকলে সুশান্তের আজ বয়স হত ৩৮। ভাইয়ের জন্মবার্ষিকীতে তাই স্মৃতিমেদুর দিদি শ্বেতা।
ঠিক কী লিখেছেন শ্বেতা সিং কীর্তি?
শ্বেতা লেখেন, ‘আমার সোনা ভাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। চিরকাল তোমাকে ভালবাসি... এই ভালোবাসার শক্তি অসীম। আশাকরি, তুমি লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে বাস করবে এবং তাঁদের ভাল হতে অনুপ্রাণিত করবে। তোমার উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে যাবে লক্ষ লক্ষ যুবক। তুমি ঈশ্বরের মতো, উদার হতে অনুপ্রাণিত করেছ। সবাই বুঝতে পারে যে ঈশ্বরের কথায় এগিয়ে যাওয়াই একমাত্র উপায়, যা তোমাকে গর্বিত করে।৩…২….১ শুভ জন্মদিন আমাদের পথপ্রদর্শক তারকা, তুমি সর্বদা উজ্জ্বল থাকো এবং আমাদের পথ দেখিও।'
নিজের লেখার সঙ্গে সুশান্তের বেশকিছু মুহূর্তে ভিডিয়োর কোলাজ পোস্ট করেছেন শ্বেতা সিং কীর্তি। যেখানে দেখা গিয়েছে হাসিখুশি উজ্জ্বল সুশান্তকে।
সুশান্তেরএই আমেরিকাবাসী বোন শ্বেতা সিং কীর্তি তাঁর নতুন বই 'পেইন: আ পোর্টাল টু এনলাইটেনমেন্ট'-এ সুশান্তের স্মৃতিচারণ করেছেন। সেই বইয়ে ভাইকে নিয়ে কী লিখেছেন শ্বেতা।
সুশান্তের জন্ম
শ্বেতা তাঁর বই 'পেইন'-এ লিখেছেন, বাবা-মা তাঁর জন্মের পরে পুত্র সন্তান চাইছিলেন, কারণ তাঁর মায়ের প্রথম সন্তান ছিল ছেলে, যাঁকে তিনি অল্পবয়সেই হারান। শ্বেতা লেখেন, 'আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে প্রায়ই বলেন যে মা ও বাবা ছেলে চেয়েছিলেন, কারণ মায়ের প্রথম সন্তান ছেলে ছিল এবং তিনি খুব অল্প বয়সে তাঁকে হারিয়েছিলেন। অনেক আচার-অনুষ্ঠান ও আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডের পর ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি (আজকের এই দিনে) জন্মগ্রহণ করেন সুশান্ত।
ভাইবোনের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা
শ্বেতা বলেন, তিনি সুশান্তের চারপাশে অত্যন্ত সুরক্ষিত বোধ করতেন, কারণ তাঁর মা বিশ্বাস করতেন যে সুশান্ত তাঁদের জীবনে বহু আকাঙ্ক্ষিত আগমনের অনুঘটক। শ্বেতা লেখেন, 'বেড়ে ওঠার সময়, আমরা একে অপরের ছায়াসঙ্গী ছিলাম - সবসময় একসঙ্গে থাকতাম। আমরা খেলতাম, নাচতাম, পড়াশোনা করতাম এবং দুষ্টুমিও করতাম। এছাড়াও একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া, ঘুমনো সবই ছিল। লোকজনও আমাদের আলাদা করতে পারতেন না। সকলে আমাদের 'গুড়িয়া-গুলশন' বলে ডাকতেন, যেন আমরা একক সত্তা।' শ্বেতা লিখেছেন, গুড়িয়া এবং গুলশন তাঁর এবং সুশান্তের ডাকনাম।
শ্বেতার রজঃস্বলা হওয়া ও সুশান্তের প্রতিক্রিয়া
শ্বেতা লিখেছেন, তিনি যখন প্রথমবার ঋতুমতী হলেন, তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। পাছে খেলতে খেলতে দিদিকে মেরে বসে ভাই, সেজন্য সুশান্তকে শান্ত আচরণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁদের মা। এরপর শ্বেতা যখন ব্যবহার করা প্যাড ফেলে দিতে যাচ্ছিলেন, তখন সুশান্ত তাঁর দিদিকে জিজ্ঞাসা করে বসেন, ‘কী এমন জিনিস যা তুমি আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারো না? আমাদের মধ্যে এই আড়াল আমার ভালো লাগে না।’ শ্বেতা বলেন সুশান্ত তাঁর জন্য ভীষণই সংবেদনশীল ছিল। তাঁরা একে অপরের ভীষণই কাছের মানুষ ছিলেন।
শ্বেতার বিয়ে
আমি যখন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, ভাই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, আমরা দুজনেই সেদিন খুব কাঁদছিলাম। সেটা খুবই মন খারাপ করা একটা মুহূর্ত ছিল। শ্বেতার কথায়, আমরা জানতাম যে আমরা আর একসঙ্গে থাকব না, আমরা একে অপরকে আগের মতো দেখতে পাব না। শ্বেতা লিখেছেন, বিয়ের পরে আমেরিকা চলে যাওয়ার সময় ভাইকে ফেলে যেতে তিনি খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন।
শেষ দেখা
শ্বেতা জানান, বলিউডে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সুশান্ত তাঁর সঙ্গে বহু বছর দেখা করতে যাননি। তবে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর দেশেই তাঁদের দেখা হত। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তাঁদের আর দেখা হয়নি। এরপর ২০২০র জানুয়ারিতে তাঁরা দেখা করবে ভেবেছিলেন, তবে সেটাও হয়নি। ২০২০র ১৪ জুন মুম্বই থেকেই চিরবিদায় নেন সুশান্ত।
শ্বেতা সবশেষে লেখেন, ১৩ জুন রাতে (মার্কিন সময় অনুযায়ী) তাঁর স্বামীই তাঁকে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর দেন, তখন তিনি সেকথা শুনে বিছানায় ছিটকে পড়েছিলেন।শ্বেতা লিখেছেন, ‘আমি কাঁদিনি। আমার শরীর, মন সেই ধাক্কায় অবশ হয়ে গিয়েছিল।’