Barrackpore Girl Killed By Mother: বারো বছরের মেয়েটি মায়ের সঙ্গে ঘুমোচ্ছিল শান্তিতে। কিন্তু মানুষের মন বড় বিচিত্র। যা প্রত্য়াশিত, তা সবসময় ঘটতে দেয় না মন। এক্ষেত্রেও যেন ঠিক তাই। ছোট্ট রাজন্যার ঘুম চিরঘুম হয়ে গেল তাঁর মায়ের দৌলতে! মা কবিতা ঘোষ গলা টিপে খুন করলেন একরত্তি মেয়েটিকে। অভিযোগ এমনটাই। গত শুক্রবারের এই ঘটনা তোলপাড় করেছে অনেকের মন। সন্তানকে সবচেয়ে আগলে রাখেন যিনি, সেই মা-ই গলা টিপে মেরে ফেলছেন বলে অভিযোগ । কারণ হিসেবে অভিযুক্ত যুক্তি দিচ্ছেন সমাজের ‘ব্যাধি’র। ঘন ঘন ধর্ষণ-খুনের ঘটনা সমাজের ছবি অনেকটা স্পষ্ট করে দেয়। তা বলে নিজের সন্তানকেই খুন? এও কি সম্ভব? কোন মানসিক অবস্থান থেকে? এর পিছনে সমাজের ভূমিকা সত্যিই কতটা? এই প্রশ্নগুলিই করা হয় ফর্টিস হাসপাতালের মনোবিদ সৃষ্টি সাহাকে। HT বাংলার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে সেই নিয়ে আলোচনা করলেন চিকিৎসক।
মানসিক সমস্যা কতটা ভয়াবহ
কবিতা ঘোষ বহুদিন ধরেই মানসিক সমস্যার শিকার বলে জানাচ্ছে প্রাথমিক সূত্র। শুরুতেই এই প্রসঙ্গে মনোবিদ সৃষ্টির মন্তব্য, ‘মানসিক সমস্যা আছে কি না তা তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। সত্যিই যদি থেকে থাকে, তাহলে প্রথমে জানা জরুরি সমাজে এই নিয়ে সচেতনতার অভাব। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকেই কথা বলতে চান না। ফলে সমস্যা বাড়তে বাড়তে এক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তবে শুধু মানসিক সমস্যার উপর সব দায় চাপিয়ে দিলেও চলবে না।’
বাবা-মা চিন্তা করেন…
প্রায় প্রত্যেকেই উপরের শিরোনামটির সঙ্গে পরিচিত। ছেলে হোক বা মেয়ে — কোথায় গেল, কী করছে সেই চিন্তা অনেকের বাবা-মা-ই করেন। মেয়ে সন্তান হলে কিছু ক্ষেত্রে চিন্তাটা বাড়ে বৈ কমে না। আর এই চিন্তা অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগের মতো পরিস্থিতি যথেষ্ট মানসিক চাপও তৈরি করে। আর পাঁচজন মায়ের মতো মেয়েকে নিয়ে এমনই মানসিক চাপের শিকার ছিলেন কবিতা ঘোষ? তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার প্রবণতা থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে বলে মত মনোবিদ সৃষ্টি সাহার। তাঁর কথায়, ‘এই আবেগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চরম অঘটনও ঘটিয়ে ফেলতে পারে যে কেউ।’
নাগরিক মনে আরজি করের প্রভাব
আরজি কর ঘটনার অভিঘাতকে এর কারণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অভিযুক্তের বয়ানেও পরোক্ষভাবে তেমনটা উল্লেখ ছিল। আরজি করের নৃশংসতা বহু মানুষের মনে প্রভাব ফেলেছে। সেই প্রভাবই চরমভাবে পড়েছিল কবিতার মনে? দীর্ঘদিনের মানসিক সমস্যা আর আরজি কর প্রভাবের যৌথ ফল এই খুন? তদন্তসাপেক্ষ। তবে আরজি করের প্রভাবকে যে উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তা স্বীকার করছেন সৃষ্টি। তাঁর কথায়, ‘আরজি কর ঘটনার পর অনেক মনোবিদই সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করছিলেন যে তাদের কাছে রোগীরা এসে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। পুরনো কোনও খারাপ স্মৃতি ফিরে আসছে রোগীদের মনে। ভয় পাচ্ছেন। অনেকে কাছের মানুষদের নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করছেন।’ স্বাভাবিকভাবে সৃষ্টিও এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁর মতে, ‘ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ঘটে চলেছে বহুদিন ধরে। কিন্তু আরজি কর কাণ্ডের নৃশংসতা বেনজির। তাই অনেকেরই দুশ্চিন্তা, ভয়, উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছে একধাক্কায়।’ সংবাদমাধ্যমে দেখা গিয়েছে,অভিযুক্ত মায়ের যুক্তি দিয়েছেন দিনকাল ভালো নয়। মেয়ে বড় হলে তার ওপর অত্যাচার হবে। এই ভাবনা থেকে আশঙ্কার জেরে নিজের মেয়েকে গলা টিপে খুন করেছেন। সমাজ নিয়ে এই দুশ্চিন্তা ক্লিনিকেও অনেক রোগীর মধ্যে দেখেছেন সৃষ্টি। তাঁর কথায়, ‘সমাজ কোন দিকে এগোচ্ছে, তা নিয়ে রীতিমতো ভয়, দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ মানুষদের অনেকে।’
প্রচণ্ড ভয়, দুশ্চিন্তা থেকেই খুন?
এই ঘটনা যদি মানসিক সমস্যা থেকে হয়ে থাকে, তবে প্রচণ্ড ভয় কাজ করতে পারে বলে জানাচ্ছেন সৃষ্টি। তাঁর কথায়, ‘মানসিক সমস্যা থাকলে ভয়, দুশ্চিন্তার মতো আবেগগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি সব আবেগই সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেমন ভয় হয়ে যায় প্রচণ্ড ভয়, দুশ্চিন্তাও তা-ই। এই তাৎক্ষণিক আবেগের বশে অঘটন ঘটিয়ে ফেলা অস্বাভাবিক নয় মোটেই।’
কখন চিকিৎসার দ্বারস্থ না হলেই নয়?
নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণই আসল বলে জানাচ্ছেন সৃষ্টি। তাঁর কথায়, ‘মানুষের মন বড় বিচিত্র। কী যে ঘটিয়ে ফেলতে পারে, কেউ জানে না। তাই আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে প্রত্যেককেই সতর্ক হতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে অনেকেই চরম দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। কেউ যদি মনে করেন এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন, তবে দ্রুত মনোবিদের সাহায্য নেওয়া উচিত। ফেলে রাখা মোটেই উচিত নয়। এখানেই দরকার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও সচেতনতা।’